সিএসবি টুয়েন্টিফোর :
কক্সবাজারে আবাসিক হোটেল কক্ষে আওয়ামীলীগের নেতা সাইফুদ্দিনকে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে হত্যার নেপথ্যে ‘নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম এমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, নৈতিক স্খলন জনিত কারণে অনৈতিক একটি সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন সাইফুদ্দিন ও আটক আশরাফুল ইসলাম। যার কিছু অংশ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়। আর এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে টাকা বিনিময়ের একটা চুক্তি ছিল। চুক্তি মতে টাকা পরিশোধ না করা, ভিডিও ধারণ করায় প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠে এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করেছে আশরাফুল।
আশরাফুল ইসলামকে আটকের পর পুলিশ নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে প্রাথমিক যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তাতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ বিষয়টি আরও অধিকত তদন্ত করছেন বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি জানান, সাইফুদ্দিন ও আশরাফুলের পরিচয় খুব বেশি দিনের না। খুব বেশি হলে এক সপ্তাহের পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে মোবাইল ফোনে আলাপ, ফেসবুকে কথা বলার পর ২০ আগস্ট প্রথম দেখা করে দুইজন। সাইফুদ্দিন তার মোটর সাইকেলের পেছনে বসিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এক পর্যায়ে কয়েকটি পেয়ারা ও এক বোতল চোলাই মদ নিয়ে বিকালে দুই জন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষে যান। ওখানে অনৈতিক সম্পর্কটি হয়। এরপর হোটেল থেকে বের হয়ে মোটর সাইকেলে যোগে দুইজন শহরের লাল দিঘীর পাড়স্থ এলাকা আসেন। এরপর আশরাফুলকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে দিয়ে এক শত টাকা চলে যেতে বলেন। ওই সময় টাকার বিষয়টি নিয়ে তর্ক হলেও আশরাফুলের চলে যায়।
এরপর সাইফুদ্দিন হোটেলে ফিরে যান এবং ঘন্টা খানিক পর আবারও আশরাফুলকে ফোন করে হোটেলে আসতে বলেন এবং না আসলে ভিডিও প্রচারের হুমকি দেন উল্লেখ করে এসপি বলেন, এবার আশরাফুল আসার সময় ছাকু সাথে নিয়ে আসে। কক্ষে প্রবেশ করে দুইজন তর্ক এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান। এতে আশরাফুল উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করলে সাইফুদ্দিন খাটে পড়ে যান। ওই সময় গলা থেকে শব্দ হওয়ায় বালিশ এবং বিছানার চাদর নিয়ে মাথা চেপে ধরে এবং সাইফুদ্দিনের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে হাত বেঁধে দেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আশরাফুল তার হাতে থাকা রক্তের চিহ্ন ধুয়ে সাইফুদ্দিনের মোবাইল ও মোটর সাইকেলের চাবি নিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়। তারপর মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়।
হোটেল থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনায় পুলিশ ৭ জনকে নানাভাবে জিজ্ঞাসা এবং প্রযুক্তির সহায়তায় আশরাফুলকে শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, এর প্রেক্ষিতে ভিত্তিতে সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অস্থায়ী তল্লাশী চৌকি স্থাপন করা হয়। টেকনাফমুখি একটি বাসে তল্লাশীর সময় পুলিশ আশরাফুল ইসলাম আটক করে। আশরাফুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার ব্যবহৃত ছাকু, মোবাইল এবং মোটরসাইকেলের চাবিটি একটি নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে মোটর সাইকেলটিও উদ্ধার করেছে। এব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার বলছেন, সাইফুদ্দিনের শরীরে ১৭ টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর পুরো হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছেন সিসিটিভির ফুটেজে শনাক্ত হওয়া আশরাফুল ইসলাম একা। আশরাফুলও এমন বিষয়টি জানিয়েছে। তারপরও ঘটনার নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে কিনা তদন্ত করা হচ্ছে।
নিহতের সাইফুদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের এক সময়ের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও।
সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে হাত বাঁধা ও রক্তাক্ত সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আশরাফুল কক্সবাজার শহরে দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার একটি মাদ্রাসার ছাত্র এবং তার পিতা একজন জেলে। স্থানীয়দের দাবি পরিবার রোহিঙ্গা।
পাঠকের মতামত